নিজস্ব প্রতিবেদক:টানা ১৮ দিনের প্রচার-প্রচারণা শেষ। আগামী শনিবার (৬ জানুয়ারি) রাত পোহালেই ভোট। সব শঙ্কা কাটিয়ে দুয়ারে কড়া নাড়ছে নির্বাচনের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। তবে ভোটের আগেই রাজশাহীতে সহিংসতা শুরু হয়েছে। জনমনে আতঙ্ক ছড়াতে বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) গভীর রাতে রাজশাহীর তিন উপজেলার চারটি কেন্দ্রে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, সহিংসতার আশঙ্কায় মানুষ যেন ভোটকেন্দ্র বিমুখ হয় সেজন্যই এ অপচেষ্টা চালাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। তাই আজ থেকে রাজশাহীর ভোটকেন্দ্রগুলোতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে রাজশাহী জেলায় ৩১০ ও বিভাগে ৩ হাজার ১১৯টি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ কোটি ৫৪ লাখ ৬০ হাজার ৩৩২ জন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৪৩ জন প্রার্থী। এর মধ্যে রাজশাহী জেলার মোট ভোটার ২১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৯৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১০ লাখ ৮৪ হাজার ৭৩০ জন ও নারী ভোটার ১০ লাখ ৯২ হাজার ৯৬৬ জন। এর মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১৮ জন।
রাজশাহী বিভাগের ৩৯টি আসনে ৩ হাজার ১১৯টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে নওগাঁ জেলার ১টি আসনের প্রার্থী মারা যাওয়ায় সেখানে ভোট হচ্ছে না। বাকি ৩৮টি আসনে ভোট হবে। এ ৮ জেলার ৫ হাজার ৪৩২টি কেন্দ্র আছে। এর মধ্যে রাজশাহী জেলায় ৩১০ ও বিভাগে ৩ হাজার ১১৯টি ভোটকেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের ৫৮ শতাংশ।
রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে, রাজশাহী জেলায় ৬টি আসনের ৭৭০টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৩১০টি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ৩টি আসনের ৫১২টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৩২৫টি।
নওগাঁ জেলার ৬টি আসনে ৭৭৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৪১৪টি। নাটোর জেলার ৪টি আসনের ৫৬৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ২৪৫টি।
পাবনা জেলার ৫টি আসনের ৭০১টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৪৯৬টি। সিরাজগঞ্জের ৫টি আসনের ৮৯২টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৪৬৬টি। বগুড়ার ৭টি আসনের ৯৬৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৬৬২টি ও জয়পুরহাটের ২টি আসনের ২৫৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ১৮৯টি।
এদিকে পার্শ্ববর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মোট ভোটার সংখ্যা ১৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ লাখ ৮৩ হাজার ৪৭৮ জন, নারী ভোটার ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৮৪৩ ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১ জন।
নওগাঁ জেলার মোট ভোটার সংখ্যা ২২ লাখ ১৯ হাজার ২৮১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১১ লাখ ৬ হাজার ২৫৬ জন, নারী ভোটার ১১ লাখ ১৩ হাজার ২৫ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১০ জন। নাটোর জেলার মোট ভোটার ১৪ লাখ ৬২ হাজার ৬৭২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭ লাখ ৩১ হাজার ১৯০ জন, নারী ভোটার ৭ লাখ ৩১ হাজার ৪৮২ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১০ জন। পাবনা জেলার মোট ভোটার ২১ লাখ ৩৪ হাজার ২৭৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ লাখ ৮০ হাজার ৭৯৬ জন, নারী ভোটার ১০ লাখ ৫৩ হাজার ৪৮১ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১৩ জন।
অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ জেলার মোট ভোটার ২৫ লাখ ৩৯ হাজার ৯১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৬১০ জন, নারী ভোটার ১২ লাখ ৪২ হাজার ৪৮১ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১৯ জন। বগুড়া জেলার মোট ভোটার ২৮ লাখ ৭৬ হাজার ৪৮৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৪ লাখ ৩৩ হাজার ৮৩৭ জন, নারী ভোটার ১৪ লাভ ৪২ হাজার ৬৪৯ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ২৬ জন।
উত্তরের অপর জেলা জয়পুরহাটের মোট ভোটার সংখ্যা ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৬৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৬৩৪ জন, নারী ভোটার ৩ লাখ ৯২ হাজার ৫৮ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৭ জন।
রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম প্রামাণিক জানিয়েছেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সাধারণ ভোটকেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে থাকবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেবে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভোটকেন্দ্রগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এর পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবে সশস্ত্র বাহিনী। আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি থাকবে না। এ সময় তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে আসার জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান।
পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, রাজশাহী বিভাগে ৩৯টি আসন রয়েছে। ১টি সদরে বাকি ৩৮টি রেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। এ আসনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোথাও কেউ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে চাইলে তাকে কঠোর হাতে দমন করা হবে। নির্বাচনের আগের দিন থেকে পরের দিন পর্যন্ত এ বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল থাকবে।